ট্যাব ডিভাইসের মাধ্যমে শিশুদের ইংরেজি শেখাচ্ছেন ক্লাস শিক্ষক। শিশুরা ক্লাস উপভোগ করছে এবং চেষ্টা করছে শিক্ষকের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার রতিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শিশুদের এমন প্রচেষ্টা দেখে তাদের অভিভাবকরাও খুশি। নিয়মিত এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার হলে তাদের শিশুরা পড়াশোনায় আরও ভালো করবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া (ছদ্মনাম) বলেন, আমি আগে পড়াশোনা ভালোভাবে বুঝতাম না, কিন্তু এখন ভালো করে বুঝি। কারণ আমাদের যে ট্যাবগুলো দিয়েছে, সেগুলোতে ইংরেজি ও বাংলার অধ্যায়গুলো ছড়া আকারে রয়েছে, যা সহজেই মুখস্ত হয়ে যায়। এ ছাড়া সহজভাবে দেওয়া আছে গণিতও।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা আক্তার (ছদ্মনাম) জানায়, তারা বিভিন্ন ধরনের কুইজ পরীক্ষায় অংশ নেয়। তারা ট্যাবের মাধ্যমে এ ধরনের পরীক্ষা দিতে চায়। কাগজে প্রশ্ন তৈরি ও প্রিন্ট করতে সময় লাগে। কিন্তু ট্যাব ডিভাইসে পরীক্ষায় সময় লাগে না। তাই ট্যাবে খুব আনন্দের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে পারছে বলে জানায় সে।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিকভাবে অভিভাবকরা সচেতন ছিলেন না। তারা ভেবেছিল ট্যাব দিলে ক্লাসে তাদের সন্তানরা নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সাইট বা খারাপ জিনিস দেখতে চাইবে। তাই তারা প্রথমে এগিয়ে আসেনি। পরে অভিভাবকদের এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া হয়। ট্যাবে অপ্রয়োজনীয় সাইট বন্ধ থাকায় শিশুরা অ্যাপ লগ ইন করে পড়াশোনা করতে পারছে। এভাবে পড়াশোনায় ভালো ফল পাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে।
এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাপলা সরকার জানান, ট্যাবের বিষয়বস্তু বিভিন্নভাবে করা হয়েছে। ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে ই-কনটেন্টগুলো। কার্টুন আকারে ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট বানানো হয়েছে। বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়কে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। শিশুরা সহজে বুঝতে পারে। পাশাপাশি লক্ষ করা গেছে যে তাদের মধ্যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কম। এতে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটছে। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সর্বোপরি প্রযুক্তির সহায়তায় পড়ালেখার গতি বেড়েছে শিশুদের মধ্যে।
একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হক চৌধুরী বলেন, প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ট্যাব দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুগুলো ভালোভাবে সেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। পড়ালেখার আগ্রহ বাড়ায় শ্রেণিকক্ষে শিশুদের উপস্থিতিও বেড়েছে। এসব ট্যাব দিয়ে সহযোগিতা করেছে একটি এনজিও সংস্থা।
মূলত এই বিদ্যালয়ের মতো উপজেলার ৬০টি বিদ্যালয়ে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ছাত্রীদের ট্যাবের মাধ্যমে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত পড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন, হেম্পেল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে এটির বাস্তবায়ন করছে ফ্রেন্ডশিপ এবং গণসাক্ষরতা অভিযান।
প্রকল্প পরিচালক শাহীন ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জের ১২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে এ প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছে। এর অধীনে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির মোট ১২ হাজার ৫৩৬ জন মেয়েশিশু রয়েছে। এ প্রকল্পটির মূল উদ্দশ্য হলো— ট্যাবের মাধ্যমে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের ওপর দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি শিশুবান্ধব ই-কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষাপদ্ধতিকে আরও সহজ করা। এর পাশপাশি আমরা এসব স্কুলের শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছি। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর সহায়তায় সেভ দ্য চিলড্রেন এটির কাজ করছে। তিনি বলেন, তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটি চলতি বছরের মে মাসে শেষ হয়ে যাবে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক (শিক্ষা) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ই-কনটেন্টের সুবিধাই হলো শিশুরা নিজেরাই লেসনগুলো বের করে আয়ত্ত করতে পারে। তবে শিশুদের সহযোগিতার জন্য রয়েছে শিক্ষক ও ইুজই প্রকল্পের কর্মকর্তারা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— ট্যাবগুলো দেওয়ার পর তাদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ বেড়েছে, ক্লাসে উপস্থিতি বেড়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যেসব স্কুলে ট্যাব নেই এসব স্কুলের তুলনায় ট্যাব পাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে ক্লাস পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে।